বাংলায় রাজনীতি শেখার জন্য কোনো গাইড আছে?
রাজনৈতিক বাল্য শিক্ষা এমনই এক বই। তবে এটি পাঠ্যবই নয়। এটি একটি ব্যঙ্গাত্মক ব্যাকরণ বই। বইটির উদ্দেশ্য রাজনৈতিক শিশুকে নাগরিক স্নাতক করে তোলা।
তবে বইটি রাজনীতিবিদদের চাইতে রাজনীতির জ্ঞান বিবর্জিত আমজনতার জন্য অধিক উপযোগী।
এই আমজনতাকে লেখক বলেছেন ‘রাজনৈতিক শিশু’। আর রাজনীতিবিদেরা বয়স্ক পাঠক।
বইয়ের শুরুতেই লেখক স্পষ্ট করেছেন যে বইটি রাজনৈতিক শিশুদের উদ্দেশ্যে লিখিত। বইটি বয়স্কদের গোপনে পড়া উচিত। বয়স্ক অর্থাৎ যারা রাজনীতি করতে চান বা শিখতে চান।
তবে সাধারণ মানুষের জন্য রাজনৈতিক শিক্ষার জন্য বইটি অবশ্য পাঠ্য।
বর্ণ পরিচয়: রাজনীতির ‘অ আ ক খ’
লেখক রাজনীতির আদ্যোপান্ত শেখাতে বর্ণমালাকে ব্যবহার করেছেন! উদাহরণ:
অ = অন্যের ভালমন্দের পরোয়া করিও না; নিজের লাভ-লোকসান আগে দেখিও।
আ= আমদানি রফতানির আধুনিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এই যে, আমদানি মানে আমার পকেটে আমদানি; রফতানি মানে তোমার পকেট হইতে রফতানি।
ও= ওয়াদা খিলাফ করিতে কিছুমাত্র দ্বিধা করিও না। এ বিষয়ে দ্বিধা করা নৈতিক দুর্বলতার লক্ষণ।
ছ= ছাত্রসমাজকে ছত্রভঙ্গ করিতে ভুলিও না; নইলে ওরা মেম্বর-মন্ত্রীদের ছক্কা-পাঞ্জা করিয়া ছাড়িবে।
রাজনীতির ব্যাকরণ
“যে শাস্ত্র জানিলে রাজনীতি শুদ্ধরূপে করিতে, বলিতে ও লিখিতে পারা যায় তাকে রাজনীতির ব্যাকরণ বলা হয়।”
বইটি পড়লে বোঝা যায় রাজনীতির ব্যাকরণ রাজনীতিবিদরা খুব ভালোই রপ্ত করেছেন।
কিন্তু সাধারণ মানুষের এই শাস্ত্র সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকে না। একারণে আমরা রাজনীতিবিদদের কাজ ও কথার সঠিক অর্থ বুঝে উঠতে পারি না।
রাজনীতির ব্যাকরণে তিনি বিভিন্ন ধারণার নতুন সংজ্ঞায়ন করেছেন যথাক্রমে হ্যারল্ড লাস্কি-র রাজনীতির ব্যাকরণ (A Grammar of Politics) এবং ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর বাঙ্গালা ব্যাকরণ-এর আদলে।
কিছু নমুনা:
শব্দ = অর্থহীন আওয়াজকে শব্দ বলে। এই শব্দ যত বেশি মোটা, ভারী, উঁচা, বুলন্দ ও কর্ণভেদী হয়, তত বেশি শুদ্ধ হয়। গলার আওয়াজে না কুলাইলে মাইক ব্যবহার করিবে।
উত্তম পুরুষ = আমি ও আমরা অর্থাৎ আমার পরিবারের লোক ও আত্মীয়স্বজন।
মধ্যম পুরুষ == তুমি ও তোমরা অর্থাৎ তোমরা যারা আমার দলে আছ।
অধম পুরুষ = সে বা তাহারা। যারা আমার বা তোমার সাথে নাই তারা।
বইয়ের পরবর্তী পরিচ্ছেদগুলো এই ব্যাকরণেরই বাস্তব দৃষ্টান্ত।
কিভাবে শিশু শ্রেণী থেকে ধাপে ধাপে জনসেবায় ডক্টরেট ডিগ্রি নেয়া যায় তা যেমন আলোচনা করা হয়েছে। তেমনি বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে নমিনেশন পাওয়া থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন কেস স্টাডি।
একনজরে রাজনৈতিক বাল্য শিক্ষা
- রাজনৈতিক ‘শিশুদের’ জন্য প্রথম শ্রেণির ‘রাজনীতি গাইড’
- “অ” থেকে “চন্দ্রবিন্দু” পর্যন্ত প্রতিটি বর্ণের রাজনীতিক অর্থ
- বাস্তব উদাহরণে শেখানো হয়েছে কিভাবে রাজনীতির ব্যাকরণে দীক্ষা নিতে হয়
- প্রাপ্তবয়স্ক রাজনীতিবিদদের গোপনে পড়া উচিত 😏
এখনও রাজনীতির শিশু? রাজনীতিতে পাস করতে হলে প্রথম ভাগ পাশ করতেই হবে।
বই: রাজনৈতিক বাল্য শিক্ষা (প্রথম ভাগ: বর্ণ পরিচয়)
লেখক: আবুল মনসুর আহমদ
বইটি সংগ্রহ করুন