প্রদোষে প্রাকৃতজন

১৯৩৬ সালে তার জন্মের ঠিক ৭৩০ বছর আগে বাংলায় মুসলিম শাসনের পত্তনকারী মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের দেবকোটে মৃত্যুবরণ করেন।

এর বহু বছর পরে ১৯৮৪ সালে, বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের ঠিক আগের সময় নিয়ে শওকত আলী একটি উপন্যাস লেখেন। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা উপন্যাস প্রদোষে প্রাকৃতজন

উপন্যাসটিতে লেখক ইতিহাসের বর্ণনার ভিত্তিতে সেই সময়কে কল্পনা করেছেন। নির্মাণ করেছেন এক ধূসর জগত।

বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের পূর্বে এ অঞ্চলের শাসনক্ষমতা ছিল রাজা লক্ষণ সেনের হাতে।

লক্ষণ সেনের সময়েই বাংলায় মুসলিম বণিকদের যাতায়ত ছিল। এর প্রমাণ পাওয়া যায় লক্ষণ সেনের সভাকবি হলায়ূধ মিশ্র রচিত একটি সংস্কৃত চম্পূকাব্যে। বইটির নাম শেক শুভোদয়া। বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয় ও লক্ষণ সেনের পলায়নের আগেই রচিত হয় এ গ্রন্থটি।

এক সাক্ষাৎকারে লেকক জানান যে একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে তিনি প্রদোষে প্রাকৃতজন উপন্যাসটি রচনার ধারণা পান। প্রশ্নটি হলো এ অঞ্চলে মুসলিম সংখ্যাধিক্যের কারণ কী?

লেখকের প্রতীতী হলো এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ ছিল সাধারণ বা প্রাকৃতজন। এবং সেন শাসনামলের উৎকট বর্ণপ্রথা দ্বারা নানাভাবে বঞ্চিত এবং নিপীড়িত। কাজেই বর্ণপ্রথাহীন মুসলিমদের জীবন প্রাকৃত মানুষদের কাছে আগ্রহের বিষয় ছিল।

লক্ষণ সেনের পরাজয়ের পর যখন শাসন ক্ষমতায় মুসলিমরা আসে তখন স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপক ধর্মান্তর ঘটে।

এ ব্যাখ্যার ভিত্তি হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন শেক শুভোদয়া কাব্যটিতে উল্লেখিত কিছু টুকরো ঘটনাকে।

প্রদোষে প্রাকৃতজন উপন্যাসের ভাষা তৎসম শব্দবহুল। তবে একইসাথে প্রাঞ্জল। লেখকের শব্দচয়ন এবং ভাষাভঙ্গী খুব সহজেই আমাদের নিয়ে যায় বহু শতক আগের সেই ধূসর অতীতে।


বই: প্রদোষে প্রাকৃতজন
লেখক: শওকত আলী
ধরন: ঐতিহাসিক উপন্যাস
বইটি সংগ্রহ করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *