লেখালেখি বিষয়ক যে ১০টি বই লেখকদের অবশ্যই পড়া উচিত

ব্যাখ্যার অতীত কোনো প্রতিভার বিষয় নয় লেখালেখি। চর্চা, অভ্যাস এবং জীবনবোধ থেকে তৈরি হয় লেখা। লেখালেখি বিষয়ে দেশি-বিদেশী ১০ জন লেখকের ভাবনাচিন্তা নিয়ে এই তালিকা।

স্টিফেন কিং-এর On Writing: A Memoir of the Craft 

ইংরেজি ভাষার জনপ্রিয় লেখক স্টিফেন কিং। তিনি উপন্যাস লিখেছেন ৬৫টিরও বেশি। লেখালেখি বিষয়ে কথাও বলেছেন প্রচুর। তবে যে কোনো ভাষার লেখকের জন্যেই লেখালেখি বিষয়ে তার বই On Writing গুরুত্বপূর্ণ। 

বইটিতে তিনি একাধারে নিজের লেখার স্মৃতিচারণ করেছেন আর সেইসাথে উন্মুক্ত করেছেন লেখার কারিগরি বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি।

আত্মীজীবনীমূলক প্রবন্ধের ঢঙে কিং লেখার কৌশল সম্পর্কে এমন সব পরামর্শ দিয়েছে যা বিশ্বের যে কোনো লেখকের জন্য অত্যন্ত কাজের। 

লেখালেখি অলৌকিক অনুপ্রেরণা নয় বরং চর্চার বিষয় বলে মনে করেন এ ঔপন্যাসিক। নিয়মিত লেখাই হচ্ছে লিখে যাওয়ার মূলমন্ত্র।

লেখার কৌশল শেখার জন্য বইটি খুবই কাজের। আর খেই ফিরে পেতে মাঝে মাঝে বইটি আবারও পড়তে মনে হবে। কাজেই লেখা বিষয়ক সবসময় হাতের কাছে রাখার মতো প্রথম বই স্টিফেন কিংয়ের On Writing: A Memoir of the Craft।

ই.বি. হোয়াইট ও উইলিয়াম স্ট্রাংক জুনিয়র-এর The Elements of Style

শার্লটস্ ওয়েবের লেখক ই. বি. হোয়াইট এবং তার শিক্ষক উইলিয়াম স্ট্রাংক যৌথভাবে লেখালেখি বিষয়ক ক্ল্যাসিক এই বইটি প্রকাশ করেন ১৯১৮ সালে।

এখন অবধি লেখালেখিতে আগ্রহী সকলের কাছে বইটির উপযোগিতা সন্দেহাতীত।

সৈয়দ শামসুল হক-এর মার্জিনে মন্তব্য

বাংলাতে লেখালেখি বিষয়ক বই যে একেবারে লেখা হয় নি তা নয়। তবে সৈয়দ শামসুল হকের মার্জিনে মন্তব্য বাংলা ভাষায় লেখালেখি বিষয়ক সবচেয়ে প্রামাণ্য এবং প্রায়োগিক বই বললে অত্যুক্তি হবে না।

বাংলায় লিখতে আগ্রহী যে কারও বইটি নিঃসন্দেহে কাজে আসবে।

অ্যান ল্যামোট-এর Bird by Bird: Some Instructions on Writing and Life

এ ধারার বইয়ের মধ্যে এটিও ক্ল্যাসিক হিসেবে স্বীকৃত। অ্যান ল্যামোট একইসাথে লেখক এবং সৃজনশীল লেখার অধ্যাপক।

শুধু যে লেখকেরাই লিখবেন এমন নয়। এবং লেখা অর্থই বই প্রকাশ নয়। কেউ না পড়লে, প্রকাশিত না হলেও বা বই থেকে আয় না হলেও লেখার গুরুত্ব কতটা সেদিকে ল্যামোট জোর দিয়েছেন এ বইয়ে।

ল্যামোটের মূল বক্তব্য লেখার ক্ষেত্রে একেবারে মনমতো না হওয়াকে মেনে নেয়া শেখা দরকার। এবং মনমতো না হলেও লেখা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় কথা লেখা যতটা না দক্ষতা বা শিল্প তার চেয়ে বড় হলো এটি জীবন উপলব্ধির একটি মাধ্যম।

উইলিয়াম জিনসার-এর On Writing Well: The Classic Guide to Writing Nonfiction

জিনসারের এ বইটি অবশ্যই পড়া উচিত। বিশেষ করে ননফিকশন লেখার ক্ষেত্রে জিনসারের পরামর্শগুলো অত্যন্ত বাস্তবসম্মত। 

ননফিকশন রচনার স্পষ্টতা, সরলতা এবং শৈলী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এ বইয়ে।

স্টিভেন প্রেসফিল্ড-এর The War of Art

লেখালেখিতে মনের ভেতর যে সব বাঁধা তৈরি হয় এ বইয়ে প্রেসফিল্ড সেদিকে নজর দিয়েছেন। লেখালেখি বা সৃষ্টিশীলতাকে তিনি দেখেছেন এই বাঁধাগুলোর বিপরীতে একটি যুদ্ধ হিসেবে।

এ বইটি লেখালেখির ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার জন্য আদর্শ।

জর্জ অরওয়েল-এর Why I Write

লেখার ক্ষেত্রে অরওয়েল নিজে কোথা থেকে অনুপ্রেরণা পেতেন তা তিনি তুলে এনেছেন এ বইয়ে। সেই সাথে যোগ করেছেন তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, রাজনীতি ও জীবন সম্পর্কে তার অন্তর্দৃষ্টি।

অস্টিন ক্লেওন-এর Steal Like an Artist: 10 Things Nobody Told You About Being Creative

একজন লেখক যা লেখেন তা কি একেবারেই নতুন কিছু? ক্লেওন মনে করেন লেখা বা যে কোনো সৃজনশীল সৃষ্টিকর্মের পেছনে থাকে অসংখ্য পূর্ববর্তী সৃষ্টিকর্মের প্রভাব। সেই অর্থে কোনো কিছুই একেবারে নতুন নয়।

পবিত্র সরকার-এর গদ্যরীতি পদ্যরীতি

বইটিতে বাংলা ভাষার লেখকদের জন্য প্রায়োগিক পরামর্শ দিয়েছেন। লেখক গদ্য ও পদ্য উভয় ধরনের লেখা নিয়েই আলোচনা টেনেছেন। 

অ্যানি ডিলার্ড-এর The Writing Life

ডিলার্ড লেখাকে দেখেন এক ধরনের ধ্যান হিসেবে। প্রতিনিয়ত জীবন-যাপনের ভেতরেই লেখার বীজ তৈরি হয়। 

তিনি প্রকৃতি, দৈনন্দিন জীবন এবং তার নিজের লেখার রুটিন থেকে উদাহরণ টেনে দেখিয়েছেন যে একজন লেখকের সবচেয়ে গভীর লেখাগুলো তৈরি হয় নীরবতা আর নৈঃশব্দের ভেতর থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *