দেশে বিদেশে

শান্তিনিকেতনের পাঠ শেষ করে সৈয়দ মুজতবা আলীর চাকরি হয় আফগানিস্তানে, শিক্ষক হিসেবে।

কর্মস্থল কাবুল। কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু। আপাত গন্তব্য পেশোয়ার।

পেশোয়ারে লেখক অতিথি হলেন পাঠান পুলিস ইনস্পেকটার আহমদ আলীর। পরবর্তী গন্তব্য ল্যান্ডিকোটাল শহর।

কিন্তু আহমদ আলী লেখককে ল্যান্ডকোটাল যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার ব্যপারে গা করেন না:

গত্যন্তর না দেখে লেখক আহমদ আলীকে বললেন,

সব বুঝেছি, কিন্তু আপনার পায়ে পড়ি এই পাঠানের চালে আমার চলবে না। শুনেছি এখান থেকে ল্যান্ডিকোটাল যেতে পনেরো দিন লাগে– বত্রিশ মাইল রাস্তা।

মনে হতে পারা রাস্তা অতি দুর্গম। তাই বত্রিশ মাইল পথ পাড়ি দিতে পনেরো দিন লাগে। কিন্তু ধন্দ কাটবে পাঠানদের চাল জানলে।

“আহমদ আলী গম্ভীরভাবে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কে বলেছে?’

আমি বললুম, ‘কেন, কাল রাত্তিরের দাওয়াতে, রমজান খান, সেই যে বাবরি-চুলওয়ালা, মিষ্টি মিষ্টি মুখ।

আহমদ আলী বললেন, ‘রমজান খান পাঠানদের কী জানে? তার ঠাকুরমা পাঞ্জাবি, আর সে নিজে লাহোরে তিন মাস কাটিয়ে এসেছে। খাস পাঠান কখনও আটক (সিন্ধু নদ) পেরোয় না। তার ল্যান্ডিকোটাল থেকে পেশোয়ার পৌঁছতে অন্তত দু মাস লাগার কথা। না হলে বুঝতে হবে লোকটা রাস্তার ইয়ার-দোস্তের বাড়ি কাট্ করে এসেছে। পাঠানমুল্লুকের রেওয়াজ প্রত্যেক আত্মীয়ের বাড়িতে তেরাত্তির কাটানো, আর, সব পাঠান সব পাঠানের ভাই-বেরাদর। হিসাব করে নিন।

পেশোয়ারে অপেক্ষা করে আর দাওয়াত খেয়ে লেখকের দিন কাটতে লাগলো।

অবশ্য কাবুলে তিনি পৌঁছেছিলেন ঠিকই। এবং শিক্ষকতাও করেছেন সেখানে। কাবুল যাত্রা থেকে শুরু করে আনুমানিক ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ দুই বছর কাবুলে অবস্থান কালের স্মৃতি নিয়ে রচিত এই ভ্রমণ কাহিনী।


বই: দেশে বিদেশে
লেখক: সৈয়দ মুজতবা আলী
বইটি সংগ্রহ করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *